ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দরপতনে পাটচাষে বিরূপ প্রভাব

মেহেরপুর প্রতিনিধি
🕐 ৯:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৮

মেহেরপুরে গত দুই বছর ধরে পাটের দরপতনের হতাশায় ভুগছেন পাটচাষিরা। সাম্প্রতিক সময়ে পাটের দর কিছুটা বেড়েছে। তবে পাটের বাজারদর নির্ধারণ না থাকায় লোকসানের আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না চাষি ও ব্যবসায়ীদের।

ফলে চলতি মৌসুমে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলার তিনটি উপজেলায় ২৫ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে।
সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের চাষি জাহিদুজ্জামান জানান, গত বছর দেড় বিঘা জমিতে পাট আবাদ করে তার লোকসান হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তাই চলতি মৌসুমে পাট আবাদ করেননি। প্রতি মণ বিক্রি হয়েছিল এক হাজার থেকে বারশ’ টাকা পর্যন্ত। দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ হলে লাভ হবে বলেও জানান তিনি।
রসিকপুর গ্রামের আকবর আলী জানান, প্রায় প্রতি বছর তিনি পাট আবাদ করে আসছেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে পাট আবাদে সাহস পাননি।
পূর্ব মালসাদহ গ্রামের চাষি মোক্তার হোসেন জানান, আমি ১০ কাঠা জমিতে পাট আবাদ করেছি। পাটে লোকসান হতে পারে। পাটকাঠি পরিবারের অনেক কাজে লাগে। চাষি পরিবারে পাটের চেয়ে পাটকাঠির কদর বেশি।
চাষি সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর ধানের দরে বেশ সন্তুষ্ট কৃষক। তাছাড়াও সবজি ও ভুট্টা চাষেও লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
তাই পাট আবাদখ্যাত মেহেরপুর জেলার চাষিরা পাটের বিকল্প চাষের দিকেই নজর দিচ্ছেন। ব্যয় ও অতিপরিশ্রম করেই পাট আবাদ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু অতি সহজেই ধান ও কিছু সবজি আবাদ করা সম্ভব। তবে জ্বালানি, বেড়াঘেরা ও ঘরের ছাউনিসহ পরিবারের নানা কাজের জন্য পাটকাঠির অপরিহার্য। এ কারণে স্বল্প পরিসরে কিছু কিছু চাষি পাট আবাদ করেছেন।
পাট ব্যবসায়ী গাংনীর হাজি আলফাজ উদ্দীন জানান, বিদেশে কাঁচা পাট রপ্তানি না থাকায় পাট বিক্রি হচ্ছে না। বিজেএমসি সঠিক সময়ে পাট কেনার টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না। অপরদিকে, অর্থাভাবে পাট কিনছেন না রপ্তানিকারকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোনালি আঁশ খ্যাত পাট এখন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা। কারণ দুই লক্ষাধিক মণ পাট এখন চাষি ও ব্যবসায়ীদের গুদামে।
২০১৬ মৌসুমে উৎপাদিত পাট তাদের ঘরে থাকলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ২০১৭ সালে আবারও পাট কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পাটের বাজার দর পতনের ফলে গুদামে পড়ে রয়েছে হাজার হাজার মণ পাট।
এদিকে পাট মন্ত্রণালয়ের সবশেষ নির্দেশ অনুযায়ী ১৭টি কৃষিপণ্য ২০ কেজি বা এর বেশি ওজনের ব্যাগে বহন করতে হলে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। কিন্তু এসব পণ্যের মধ্যে বাজারে চাল ও আলু ছাড়া অন্যান্য পণ্যে কমেনি প্লাস্টিক বস্তার ব্যবহার। নেই মনিটরিং বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কোনো প্রতিফলন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, আসলে চাষিরা যেদিকে লাভ পাবেন সেই ফসলই আবাদ করবেন।
পাটের লোকসান পোষাতে চাষিদের আউস ধান আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। চলতি মৌসুমে আউস ধানের আবাদও বৃদ্ধি পেয়েছে।

 
Electronic Paper