বালুচরে সবুজ বিপ্লব
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
🕐 ১:৫১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯
বর্ষায় যে পদ্মা হয়ে ওঠে আগ্রাসী। তার করাল গ্রাসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। এখনই সেই পদ্মার বুকে জেগে উঠেছে বালুচর। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষক। বালুচরে চাষ করছেন বিভন্নি ধরনের সবজি। এতে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন তারা।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম বলেন, বাঘা এমনিতেই কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা। নদী বিধৌত এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলেও পানি জমে থাকে না। তাই যেকোনো সবজির ফলন ভালো হয়। এ বছর বাঘা এলাকায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে। এ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
অনুকূল আবহাওয়া থাকায় বিগত যেকোনো বছরের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণ বেগুন উৎপাদন হচ্ছে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বর্তমানে এ অঞ্চলের বেগুন স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলসহ সমতল এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর বেগুন চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মূলত এ সাফল্য দেখা দিয়েছে। অন্য বারের তুলনায় এবার বেগুন চাষে বিপ্লব ঘটেছে। এখানে উৎপাদিত বেগুন এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সরেজমিন উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলসহ সমতল এলাকার আড়ানী, কুশাবাড়িয়া, গোচর, হামিদ কুমড়া, জোতরঘু, রুস্তমপুর, বাউসা, তেথুরিয়া, বাজুবাঘা ও খায়ের হাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে বেগুন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক। এ বছর আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় প্রত্যেক কৃষক তাদের নিজ নিজ জমিতে সময় মতো সার, পানি ও কীটনাশক প্রয়োগ করে বেগুন চাষ করেছেন। এ কারণে এ বছর বেগুনের ফলনও ভালো হয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বেগুনের উৎপাদন।
গোচর গ্রামের বেগুন চাষি তোজাম্মেল হক বলেন, তিনি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। কুশাবাড়িয়া গ্রামের আছাদ মিয়া জানান, তিনি গত বছর ৪৯ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করেন। তবে আবহাওয়া অনুক‚লে না থাকায় বেগুনে পোকার আক্রমণ হয়েছিল। তাই এ বছর মাত্র ৩৩ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করেছেন।
কিন্তু এবার বেগুন চাষে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্য সৃষ্টি হয়নি। যারা বেগুন গাছের পরিচর্যা ভালো করতে পেরেছেন তাদের জমি থেকে সপ্তাহে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ বেগুন উৎপাদন হচ্ছে।
পদ্মার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, অন্য বারের তুলনায় এ অঞ্চলের কৃষক এ বছর বেগুন চাষে মনোযোগী হয়েছেন। এর প্রধান কারণ এবার বেগুনে বাম্পার ফলন হয়েছে। অপরদিকে কৃষক পাচ্ছেন ন্যায্য মূল্য। চরাঞ্চলের কৃষক মজিদ দেওয়ান জানান, পদ্মার চরের গুনগত মাটি এবং আবহাওয়ার কারণে এখানকার বেগুনে একদিকে যেমন পোকা লাগে না অপর দিকে স্বাদও আলাদা।
তিনি গত বছর রমজান মাসের আগে পাঁচ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। কিন্তু বাজার মূল্য ভালো না পাওয়ায় এবার শীতের সবজি হিসেবে মাত্র দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন।