ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কিশোরগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ৮:১০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮

কিশোরগঞ্জ একটি ‘খাদ্য উদ্বৃত্ত’ জেলা। এখানে সারা বছর নানা জাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ মেট্রিকটন। স্থানীয় চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিকটন। ফলে বছরে উদ্বৃত্ত থাকে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিকটন। এসব উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য সারাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে বিশাল ভূমিকা রাখে।

শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত এ জেলার ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এখন আমন ধানের সোনালি শীষ দোলা দিচ্ছে। পোকামাকড় ও বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইয়ের আক্রমণ ছাড়াই বেড়ে উঠা সোনালি ধানের শীষে ভরে গেছে মাঠ। দিগন্ত জোড়া সোনালি ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে সবুজ পাতার মাঝে সোনালি ধানের শীষ। এ যেন চিরসবুজের বুকে সোনালি রঙের আল্পনা।

এমন অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ জেলার সবকয়টি উপজেলার কৃষক-কৃষাণী। মাঠ ভরা সোনালি ফসল দেখে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। জেলার নিম্নাঞ্চলসহ ১৩ উপজেলায় পুরোদমে আমান ধান কাটা শুরু হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। আমনের বাম্পার ফলনে ধান কাটা উৎসবে কোমর বেঁধে নেমেছেন কৃষাণ-কৃষাণিরা। তারা এখন ব্যস্ত মাঠের ধান ঘরে তুলতে।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ উপজেলায় রোপা-আমন ধানের চাষাবাদ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চাইতেও বেশি ফলন হয়েছে। এবার সারা জেলায় মোট ৭৪ হাজার ৮৬৬ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে উফশী ৬৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর, হাইব্রিড ১৫ হেক্টর, আর স্থানীয় জাতের ধান ৯ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৫ মেট্রিকটন। এর মধ্যে উফশী ধানের চাল ১ লাখ ৭৭ হাজার ১০১ মেট্রিকটন, হাইব্রিড ধানের চাল ৪৮ মেট্রিকটন আর স্থানীয় জাতের ধানের চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ৯৮৬ মেট্রিকটন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, তারা প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন ধরে রোপা-আমন আবাদ করে আসছেন। এ বছর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটায় রোপা-আমনের ফলন অন্য বারের তুলনায় তাদের জমিতে আশাতীত হয়েছে। এবার কিশোরগঞ্জের অধিকাংশ কৃষক আমন ধানের বীজতলা তৈরি করেছিল আধুনিক পদ্ধতিতে। আলোর ফাঁদ দিয়ে সনাক্ত করেছে ক্ষেতের পোকা-মাকড়। ব্যবহার হয়েছে শেড পদ্ধতি। ফলে জমিতে পোকামাকড় ও রোগবালাই কম হয়েছে। এ মৌসুমে দফায় দফায় বৃষ্টি হবার কারণে কারো জমিতেই সম্পূরক সেচ দেয়ার বেশি প্রয়োজন হয়নি।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাতিয়ার চর গ্রামের বর্গাচাষি হুমায়ুন মিয়া জানান, এবার বাম্পার ফলন পেয়েছি। দেড় একর পত্তন জমিতে প্রায় ১০০ মণ ধানের ফলন হয়েছে। ভাগাভাগি করার পর ৫০ মণ পেয়েছি। সরকার যদি ধানের ন্যায্যমূল্য দেয় তাহলে আমরা কষ্টের ফল পাব।

সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াসমিন জানান, সদরে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৫ শত ৫০ হেক্টর। অর্জিত ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৫ শত হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিকটন। তবে এবার আশা করা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মধ্যে স্বস্তি ও শান্তি ফিরে এসেছে। এ বছর সারা জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৪ হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। তাই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কৃষক এবার পুরো ফলনই ঘরে তুলতে পারবেন।

 
Electronic Paper