সাতক্ষীরায় অধিকাংশ চিংড়ি ঘের ভাইরাস আক্রান্ত
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
🕐 ৯:২৮ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৮
সাতক্ষীরায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, হিট স্ট্রোক ও গরমের কারণে প্রায় ৫০ হাজার বাগদা চিংড়ি ঘেরে ভাইরাস দেখা দিয়েছে। এতে বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ ভাইরাস আক্রান্ত ঘেরে বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে ঘেরগুলোতে ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় ঘের মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলার ৬৬ হাজার ৯০০ হেক্টরে বাণিজ্যিকভাবে বাগদার চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর চার হাজার ৬৫, তালায় তিন হাজার ৩৮, দেবহাটায় আট হাজার ৮৯৩, আশাশুনিতে ১৭ হাজার ৪০৩, কালীগঞ্জ ১৫ হাজার ৯৯৩ এবং শ্যামনগর উপজেলায় ১৭ হাজার ৫০৮ হেক্টরে চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। জেলাতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত জেলের সংখ্যা ৪৯ হাজার ২৩ জন। মৎস্যচাষি ৭৬ হাজার ৩৯৪ জন। তাছাড়া জেলায় ৫৫ হাজার ১২২টি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। এসব বাগদা চিংড়ি ঘেরে চলতি বছর চিংড়ি উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ টন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে এক হাজার ৫৪০ টন, তালায় এক হাজার ৩৫৫ টন, দেবহাটায় তিন হাজার ৫১৪ টন, কালিগঞ্জে ছয় হাজার ১০ টন, আশাশুনিতে আট হাজার ২৪৫ টন এবং শ্যামনগরে ছয় হাজার ৮৩৬ টন। তবে জেলায় বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয় শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায়। এ তিন উপজেলার অধিকাংশ মানুষ চিংড়ির চাষের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু চলতি মৌসুমে যে হারে চিংড়ি মারা যাচ্ছে তাতে অনেক ঘের মালিকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামের মঞ্জুর আলম পলাশ জানান, গত বছর চিংড়ি চাষ করে লাভ হওয়ায় এবার জমি লিজ নিয়ে চারটি ঘের করেছেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে প্রতিদিন মাছ মারা যাচ্ছে। বিনিয়োগকৃত টাকার সিকি ভাগও উঠবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র মতে, জেলায় হেক্টরপ্রতি পিএল মজুদ ৫০ হাজার। যাতে ৩৩৪ কোটি পোনার চাহিদা রয়েছে। বেশির ভাগ পোনা জেলার বাইরে থেকে সরবরাহ করতে হয়। ফলে বাগদার এসব পোনা অনেকটা ভাইরাসযুক্ত বলে চাষিরা জানান। জেলাতে ১৮২টি বাগদা পোনার নার্সারি রয়েছে। হ্যাচারি রয়েছে নয়টি। সেখানে উৎপাদিত পোনা নার্সিং করে পিএল করা হয় ৮০ কোটি। যা জেলার চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা জানান, এবার মৌসুমের শুরুতেই ভাইরাস ও হিটস্ট্রোকে অধিকাংশ ঘেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে চিংড়ি ঘের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এমন মড়ক লাগতে দেখা যায়নি। ভাইরাসের পাশাপাশি এবার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেশি চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ঘেরে পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মড়ক লাগার পাশাপাশি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে চিংড়ি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষে আমরা মৎস্যচাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি। ভাইরাস প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।