ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নার্সারিতে সফল উদ্যোক্তা মুকুল

তোফায়েল হোসেন জাকির, সাদুল্লাপুর
🕐 ৩:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২৩

নার্সারিতে সফল উদ্যোক্তা মুকুল

জীবনে সফল হতে সঠিক পরিকল্পনায় যথেষ্ট। দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করলে সেই ব্যক্তিই পোঁছাতে পারবে তার লক্ষ্যস্থানে। এমনিভাবে নিভৃত গ্রামের এক উদ্যোক্তা নার্সারি করে ঘুরিয়েছেন তার ভাগ্যের চাকা।

তিনি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দক্ষিণ মন্দুয়ার গ্রামের কৃষক মকুবুল হোসেন মুকুল। নিজ বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন বিশাকৃতিক নার্সারি। ‘তৌফিক নার্সারি’ নামের এই নার্সারিতে বিভিন্ন ওষুধি, ফুল, ফলদ, বনজ, মসলা জাতের চারা উৎপাদন করা হয়। আর এসব চারা বিক্রি করেই মুকুল এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

বৃক্ষপ্রেমী এই মুকুলের বাড়ি উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ মন্দুয়ার গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে। নার্সারি ব্যবসায় তার নেশা-পেশা।

জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে মুকুল হোসেন নিজের ৩ বিঘা জমিতে নানা জাতের চারা উৎপাদন শুরু করে। এসব চারা বিক্রি করে অনেকটা লাভের মুখ দেখেন তিনি। এই লাভের টাকা দিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণসহ ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে নার্সারির পরিধি। বর্তমানে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন এই নার্সারি। এখানে রয়েছে-আম, রামবুটান, লিচু, পিটফল আপেল-আঙ্গুর ফল ইত্যাদি। ফুলের মধ্যে গোলাপ, বেলী, ক্রিসমাস্টি, এটোলিয়াম, এ্যারোমেটিক, জুঁইসহ আরও হরেক রকম ফুলের চারা। ওষুধির মধ্যে অর্জুন, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, নিম, জয়তুন, তুলসি ও পাথরকুশিসহ নানা প্রজাতির চারা। কাঠবৃক্ষের মধ্যে বেলজিয়াম, মেহগনি ও সেগুন চারা। মসলা জাতের মধ্যে তেজপাতা, দারু চিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ। একই সঙ্গে সোভাবর্ধন ডেকোরেটর জাতিয় চারার মধ্যে রয়েছে- ক্যাকটাস, ছাকুল্যান্টম পাতাবাহার, এ্যারোলিয়া প্রভৃতি। এছাড়া আরও বেশকিছু জাতের চারা দুলছে নার্সারি গুলোতে। নার্সারির চারাগুলো যেন শোভাবর্ধন হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে করে দৃষ্টি কাড়ছে পথচারীদের। খানিকটা প্রাণ জুড়াতে কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন আবার কেউবা কিনে নিচ্ছে নানা জাতের চারা।

সবমিলিয়ে তৌফিত নার্সারিতে উৎপাদন করা হচ্ছে লক্ষাধিক চারা। প্রতিমাসে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্যে চারা বিক্রি করা হয়ে থাকে। স্থানীয় বাজারসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এসব চারা বিক্রি করা হয়। এই নার্সারিতে সার্বক্ষণিক ৮-৯ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। বীজ-সার-শ্রমিক ইত্যাদি খরচ বাদে প্রতিমাসে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করেন এই উদ্যোক্তা মুকুল। অল্প পুঁজিতে নার্সারি ব্যবসায় সফল হয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে বৃক্ষমেলায় বেশ কয়েকবার প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। এদিকে, সফল নার্সারি ব্যবসায়ী হিসেবে নিজের পরিচিতি বাড়িয়েছেন। এরই পাশাপাশি স্থানীয় বেশ কিছু যুবকের কর্মসংস্থানও হয়েছে এ নার্সারিতে। মকুল হোসেন নতুন নতুন জাতের চারা উৎপাদন করে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জনও করেছে। একজন প্রতিষ্ঠিত নার্সারি মালিক হয়েও এখনো তিনি নিজ হাতে চারার পরিচর্যা করেন। যেন প্রতি গাছের সাথে তার সু-সর্ম্পক গড়ে উঠেছে।

তৌফিক নার্সারির এক কর্মচারি জানান, নার্সারিটি পরিচার্যাসহ চারা বাজারজাত করণে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। এ কাজটি করে নিত্যদিন ৪০০ টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। এদিয়ে ভালোই চলছে তার সংসার।

নার্সারির মালিক মকবুল হোসেন মুকুল বলেন, মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা কিনতে আসেন নার্সারিতে। এছাড়া ভ্যানে করে হাট-বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছি।

তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে একাধিকবার জাতীয় পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু আমার কপালে তা জোটেনি। অথচ দুর্বল নার্সারিগুলো এই পুরস্কার পাচ্ছেন।

সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বসনিয়া জানান, নার্সারি ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। কেউ পরিকল্পনা মাফিক নার্সারি করলে অনায়াসে স্বাবলম্বী হবেন। মুকুল হোসেনকে আরও লাভবান করতে সার্বিক সযোগিতা করা হবে।

 

 
Electronic Paper