ঈশ্বরদী কমছে না শীত-কুয়াশা, নষ্ট হচ্ছে বীজতলা
শমিত জামান, ঈশ্বরদী (পাবনা),
🕐 ১:৪৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩

ঈশ্বরদীতে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার চারা মরে যাচ্ছে। আর জীবিত চারা হলদে হয়ে গেছে। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে জমিতে চারা রোপণ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের বীজতলা রক্ষার জন্য নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৬ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি গত সাতদিনে এ উপজেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি থেকে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। আর গত তিনদিন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে।
সঙ্গে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে, যে কারণে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বীজতলা ঘুরে দেখা
যায়, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় অধিকাংশ বীজতলা মরে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বীজতলায় চারা গজায়নি।
আবার কোথাও বীজতলা হলুদ বিবর্ণ ও চারা পচে গেছে। কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, ব্রি-২৯, হাইব্রিড ময়না ও টিয়া জাতের ধানের বীজ বপন করেছিলেন। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ কৃষকদের ফের বীজতলা করতে হবে। এতে কৃষকদের খরচ বেড়ে গেলো।
উপজেলার মারমী গ্রামের কৃষক আমজাদ আলী বলেন, ১০ বিঘা জমিতে ধান আবাদের জন্য বীজতলা করেছিলাম। শীত ও কুয়াশায় অর্ধেক বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি অর্ধেকও হলদে বিবর্ণ দেখা যাচ্ছে। আবার পুনরায় চারা তৈরি করতে হবে। তা নাহলে চারা কিনে রোপণ করতে হবে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।
শহরের ইস্তা এলাকার কৃষক আনিসুর রহমান আদম বলেন, ১৬ বিঘা জমিতে ধান আবাদের জন্য বীজতলা করেছিলাম। প্রায় পুরো বীজতলা কুয়াশায় নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা না করলে আবাদ করা সম্ভব না। কৃষি অফিস যদি আমাদের নতুনভাবে বীজ দিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে এ সমস্যার সমাধান হতো।
একই এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বীজতলায় এসে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে কোনো পরামর্শ কাজে আসছে না। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও বীজতলা রক্ষা করা যাচ্ছে না।
পলিথিন ব্যবহার করে বীজতলা রক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় এটাও কৃষকরা করতে পারছে না। এবার বোরো আবাদ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ উপজেলায় শীতের তীব্রতা সবসময় বেশি থাকে।
শীত ও কুয়াশায় এখানকার কৃষকদের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তীব্র শীত থেকে বীজতলা রক্ষায় পরিমাণ মতো ছত্রাকনাশক ও সার ব্যবহারের জন্য বীজতলা রক্ষায় সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ছত্রাকনাশক ও সার প্রয়োগের পাশাপাশি বীজতলায় পানি রাখা এবং পলিথিন ব্যবহারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পলিথিন ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, অতিমাত্রায় শীত ও ঘন কুয়াশার কারণেই বেশকিছু বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ করে ছত্রাকনাশক ছিটানো ও রাতে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেসব কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে এদের মধ্যে অনেকেই কৃষি অফিসে এসে ফের বিনামূল্যে বীজ নিয়ে বপন করেছেন। কোনো কৃষক চাইলে তাকে ধানের বীজ দিয়ে সহায়তা করা হবে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
