ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৮ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা

মো: আবু নাসের রতন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
🕐 ৯:১৯ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৮ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা বিজয়নগর আখাউড়া ও কসবাকে লিচু ফলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজধানী বলা হয়। প্রত্যেক বছর তিন উপজেলার লিচু বাগানগুলো থেকে কোটি কোটি টাকার লিচু বিক্রি করে থাকেন মালিকরা। উপজেলা গুলোতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩ শতাধিক লিচু বাগান রয়েছে। দিন দিন এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। শুধুমাত্র বিজয়নগর উপজেলাতেই চলতি মৌসুমে ৪০০ নতুন লিচু বাগান হয়েছে। বাগানে বাগানে শোভা পাচ্ছে রসালো লিচু। জেলায় এবার পাটনাই, চায়না, বোম্বাই জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। প্রচণ্ড গরম থাকায় লিচুর কদরও রয়েছে বেশ।

লিচুর এই ভরা মৌসুমে বিক্রির ধুম পড়ে বিজয়নগরের আওলিয়া বাজার, সিংগারবিল, হরষপুর, চান্দুরা, বিষ্ণুপুর, ছতরপুর, আজমপুর, চম্পকনগর বাজারে। এবার আখাউড়া উপজেলার রামধননগর, চানপুর, আনোয়ারপুর রাজাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে লিচু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ৫০৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৬৫০ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা।

লিচু চাষীরা জানিয়েছেন, উৎপাদন খরচ কম, পাশাপাশি লাভবান হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে লিচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এবার যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর আকার কিছুটা ছোট। তবে সার্বিক উৎপাদন ভালো। পাটনাই জাতের লিচু বাজারজাত শুরু হয়েছে। এখন বোম্বাই, চায়না ২ ও ৩ জাতের লিচু সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে।

বাগান মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মো. রমজান মিয়া জানান, ১০ বছর আগে তার লিচু গাছ ছিল ৫-৭টি। আবাদ ভালো হওয়ায় বাড়ির পাশে খালি জায়গায় শতাধিক লিচুর চারা রোপন করেন। কয়েক বছর পরই ফলন আসতে শুরু করে। বর্তমানে তার পাঁচটি বাগান আছে। এবার মৌসুমে বিক্রি করে প্রায় আট থেকে দশ লাখ টাকা লাভ হবে।

স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রবাস ফেরত যুবকরাও নিজ নিজ এলাকায় লিচু চাষ করছেন। প্রবাস ফেরত সুলতান আহমেদ জানান, এলাকায় কর্মসংস্থানের কম সুযোগ থাকায় তিনি বিদেশে চলে যান। সেখানে সুবিধা না করতে পারায় দেশে ফিরে লিচুর চাষ শুরু করেন। এতে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি।

সোহাগ ভূইয়া নামে স্থানীয় এক লিচু চাষী জানান, তার বাগানে ৮০টি গাছ রয়েছে। পরিচর্যা ও শ্রমিক খরচ মিলিয়র ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো, এবার তার দেড় লাখ টাকার মতো লাভ হবে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা সরাসরি বাগান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাটনাই জাতের প্রতি হাজার লিচু বাগান থেকেই ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বোম্বে ও চায়না থ্রি জাতের লিচু ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রির আশা করছেন চাষীরা। এদিকে লিচু পাকার সময় ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন লিচু চাষিরা ।

বিজয় নগর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রুহল আমিন খান বলেন, লিচুর ফলন বাড়াতে চাষীদের অপ্রয়োজনীয় কীটনাশকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশপাশি অপরিপক্ক লিচু বাজারজাতকরণ থেকে বিরত থাকার প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভান রপ্রাপ্ত উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৮ কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। লিচু চাষে পরিশ্রম কম, লাভ বেশি। তাই বেশির ভাগ লোক এখন লিচু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই উপজেলায় দেশী, বোম্বাই, পাটনাই, চায়না লিচুর চাষ হয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলাগুলো থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লিচু বেশ জনপ্রিয়। ইতোমধ্যে পাটনায় জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে। বোম্বে, চায়না টু এবং চায়না থ্রি লিচু বাজারে আসতে সময় লাগবে আরও প্রায় ১০ দিন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা ছাড়াও লিচু চাষে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

 

 
Electronic Paper